Friday, December 27, 2024

Hinduism: Info: B

 001) ঋগ্বেদ    

A) বেদের চারটি খণ্ডের মাঝে প্রথম অংশটি ঋগ্বেদ।[২][৩] এটি সনাতন ধর্মের আদি উৎস। এটি বিশ্বের প্রথম গ্রন্থগুলোর মধ্যে একটি[ 

B) এই গ্রন্থই সনাতন ধর্মের মূল পাঠ। 

C) ঋগ্বেদ গ্রন্থের চারটি স্তর লক্ষিত হয়। যথা: "সংহিতা", "ব্রাহ্মণ", "আরণ্যক" ও "উপনিষদ্"। 

D) (ঋগ্বেদে মন্ত্রগুলিকে "ঋক" বলা হয়, যার নামকরণ "ঋগ্বেদ" নামের অনুসারে করা হয়েছে)  

E) ঋগ্বেদ হল বৈদিক সংস্কৃত ভাষায় লিখিত প্রাচীনতম গ্রন্থ। 

F) খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দ থেকে ঋগ্বেদের ধ্বনি ও পাঠ মৌখিকভাবে পরম্পরাগতভাবে প্রচলিত ছিল। 

G) ঋগ্বেদ সংহিতার বৃহদংশ আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ থেকে ১২০০ অব্দের মধ্যবর্তী সময়কালে ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলে (বৃহত্তর পাঞ্জাব অঞ্চলে) রচিত হয়েছিল। 

H) ঋগ্বেদের কয়েকটি ঋক ও সূক্ত হিন্দু সামাজিক অনুষ্ঠান (যেমন বিবাহ) ও প্রার্থনার সময় পঠিত হয়। 

I) ইরানি আবেস্তার স্তোত্রগুলি ঋগ্বেদের শ্লোকের অনুরূপ রয়েছে, যা অগ্নি, বায়ু, জল, সোম ইত্যাদির মতো বিভিন্ন ভারতীয় দেবতার বর্ণনা করে। 

J) ঋগ্বেদের রচনাকাল নিরূপণে পণ্ডিত সমাজে বিতর্ক রয়েছে।  

K) ঋগ্বেদের মূল অংশের সর্বজনগ্রাহ্য সময়কাল হল পরবর্তী ব্রোঞ্জ যুগ।  

L) ঋগ্বেদের যে পাঠটি আজ পাওয়া যায় সেটির মূল ভিত্তি লৌহযুগের (নিচে কালনির্ধারণ দেখুন) একটি সংকলন। 

M) প্রায় এক হাজার বছর ধরে ঋগ্বেদের মূল পাঠ সম্পূর্ণ নির্ভরযোগ্যতার সঙ্গে মুখে মুখে সংরক্ষিত হয়েছিল। 

N)  সম্ভবত গুপ্তযুগের (খ্রিস্টীয় ৪র্থ-৬ষ্ঠ শতাব্দী) আগে ঋগ্বেদ লিখিত হয়নি। গুপ্তযুগে ব্রাহ্মী লিপি সুপ্রচলিত হয়েছিল  

O) ঋগ্বেদের আদি পাঠ (যেটি ঋষিগণ অনুমোদন করেছেন) বিদ্যমান সংহিতাপাঠের পাঠের সঙ্গে কাছাকাছি গেলেও সম্পূর্ণ এক নয়। 

P) এতে কতিপয় অনার্যের নাম উল্লেখ করা হয়েছে যেমন- পিসাকাচ, সীমিয়াম্ ইত্যাদি। এতে অনার্যদের বলা হয়েছে 'অব্রত' (ব্রত না পালনকারী), 'মৃদ্ধাবাচ' (অস্পষ্ট বাণীর বক্তা), 'অনাস' (চ্যাপ্টা নাক)। 

Q) এই বেদে প্রায় ২৫টি নদীর কথা বলা হয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নদী সিন্ধুকে আরও বর্ণনা করা হয়েছে। সরস্বতীকে সবচেয়ে পবিত্র নদী হিসাবে বিবেচনা করা হয় এবং সরস্বতীর কথাও বহুবার উল্লেখ করা হয়েছে। এতে গঙ্গা একবার এবং যমুনা তিনবার ব্যবহার করা হয়েছে।

R) এই বেদে গরুর জন্য 'অহন্যা' শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। 
S) ঋগ্বেদে এমন মেয়েদের উদাহরণ রয়েছে যারা দীর্ঘকাল বা আজীবন অবিবাহিত ছিল। এই মেয়েদের বলা হত 'অমাজু'। 
T) ঋগ্বেদে বহু গ্রামের সমষ্টিকে 'বিশ' এবং বহু বিশের দলকে 'জন' বলা হয়েছে। ঋগ্বেদে 'জন' ২৭৫বার এবং 'বিশ' ১৭০ বার উল্লেখ করা হয়েছে। 'জনপদ' একটি বৃহৎ প্রশাসনিক এলাকা হিসেবে ঋগ্বেদে একবারই উল্লেখ করা হয়েছে। জনগণের প্রধানকে বলা হত 'রাজন' বা রাজা। আর্যদের পাঁচটি গোত্রের কারণে তাদের ঋগ্বেদে 'পঞ্চজন' বলা হয়েছে - এগুলি হল- পুরু, যদু, অনু, তুর্বাশু এবং দ্রহয়ু। 
U) 'বিদথ' ছিল প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠান। ঋগ্বেদে এটি ১২২বার উল্লেখ করা হয়েছে। 'সমিতি' ৯বার এবং 'সভা' ৮বার উল্লেখ করা হয়েছে। 
V) এই বেদে শুধুমাত্র হিমালয় পর্বত এবং তার একটি শৃঙ্গ মুঞ্জবন্তের উল্লেখ আছে। 
W) বেদের অন্যান্য অংশের মতো ঋগ্বেদেও বহু দেবতার প্রত্যক্ষ হয়। ঋগ্বেদের মন্ত্রগুলো দেবতাদের উদ্দেশ্যে স্তুত হয়েছে। অগ্নি, ইন্দ্র এবং সোম হল প্রধান দেবতা। অন্যান্য দেবতারা হলেন বিষ্ণু, রুদ্র (পরবর্তীকালে শিবের সমার্থক), প্রজাপতি (পরবর্তীতে ব্রহ্মা) প্রভৃতি।[৪১] বৈদিক দেবীর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য। এঁদের মধ্যে ঊষা, পৃথিবী, অদিতি, সরস্বতী, সাবিত্রী, বাক, রাত্রি, অরণ্যানী ইত্যাদি ঋগ্বেদে বর্ণিত।.[৪২] শ্রী বা লক্ষ্মীও পরবর্তী বৈদিক সাহিত্যে আছেন।[৪৩] প্রকৃতপক্ষে, বেদে প্রত্যেক দেবতা এক একটি বিশেষ জ্ঞান বা পার্থিব প্রাকৃতিক শক্তির প্রকাশক।[৪৪][৪৫]
X) ঋগ্বেদ সংহিতার প্রায় ১৫টি ভাষ্য পাওয়া যায়। কেবল স্কন্দস্বামী এবং সায়ণাচার্য সম্পূর্ণ ঋগ্বেদের ভাষ্য রচনা করেছিলেন।  
Y)  ঋগ্বেদে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে গ্রিক ধর্ম ও জরাথুস্ট্রবাদের যেন্দ আবেস্তা নামক ধর্মগ্রন্থ সঙ্গে ধর্মীয় উপাদানের প্রত্যক্ষ সাদৃশ্য করেছে, যেমনঃ অহুর থেকে অসুর, দেইব থেকে দেব, আহুরা মাজদা থেকে একেশ্বরবাদ, বরুণ, বিষ্ণু ও গরুদ, অগ্নিপুজা, হোম নামক পানীয় থেকে সোম নামক স্বর্গীয় সুধা, ভারতীয় ও পারসিকদের বাকযুদ্ধ থেকে দেবাসুরের যুদ্ধ, আর‍্য থেকে আর্য, মিত্রদেব, দিয়াউসপিত্র দেব (বৃহস্পতি দেব), ইয়াস্না থেকে ইয়যোনা বা যজ্ঞ, নারীয়সঙ্ঘ থেকে নরাশংস, অন্দ্র থেকে ইন্দ্র, গান্দারেওয়া থেকে গন্ধর্ব, বজ্র, বায়ু, মন্ত্র, যম, আহুতি, হুমাতা থেকে সুমতি ইত্যাদি।[৪৭][৪৮] 
z)  

A) তার পিতা ছিলেন একজন নিষ্ঠাবান শৈব। শিবভক্ত পিতার মতো বাল্যকালে দয়ানন্দও শিবভক্ত ছিলেন। একবার শিবরাত্রির উপবাস থাকাকালে তিনি কিছু ইঁদুরকে শিবমূর্তির উপর দিয়ে দৌড়াতে ও ভক্তের দেওয়া নৈবেদ্য খেতে দেখেন। তখন তার মনে সংশয় হয়, “শিব যদি ইঁদুরের বিরুদ্ধে নিজেকে রক্ষা করতে না পারেন, তাহলে তিনি কীভাবে পৃথিবীর ত্রাণকর্তা হতে পারেন?”[১১] 
B) বাল্যকালে তার ছোট বোন ও কাকা কলেরায় মৃত্যুবরণ করেন। ব্যাথিত মূলশঙ্কর তখন মৃত্যুচিন্তা এবং অমরত্ব লাভের উপায় অনুসন্ধান শুরু করেন। ফলে তার চিন্তা-ভাবনায় বৈরাগ্যভাব আসে। এই অবস্থা দেখে তার পিতা-মাতা তাকে বিয়ে দেওয়ার চিন্তা করেন। কিন্তু তিনি সিদ্ধান্ত নেন, বিয়ে তার জন্য নয়। ১৮৪৬ সালে ২২ বছর বয়েসে বিয়ের দিন তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে যান।[১২][১৩]
C) ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে হরিদ্বারে কুম্ভমেলায় অবস্থান করে তিনি মূর্তিপূজা, বেদবিরুদ্ধ আচারসমূহকে কুসংস্কার বা স্ব-পরিচর্যা প্রথা বলে প্রতিবাদ করেছিলেন।  
D) তিনি বলতেন, “সাধনার জন্য বাহ্যিক চিহ্ন ধারণ করার প্রয়োজন নেই, ইহা পশুবৎ মানুষের কর্ম।”[১৫] সে সময় বহু পণ্ডিতের সাথে এ বিষয়ে তার ধর্মীয় বিতর্ক হয়। তার যুক্তি এবং সংস্কৃত ও বেদ জ্ঞানের শক্তির দ্বারা তিনি বারবার বিজয়ী হন।[১৬] এসব কারণে তিনি অনেকের শূলদৃষ্টির কারণ হন। 
E) ১৮৬৯ সালে ১৭ই নভেম্বর বারাণসীর কাশীতে অবস্থান কালে ২৭ জন বিদ্বান এবং ১২ জন বিশেষজ্ঞ পণ্ডিতের সাথে তার বিতর্কের আয়োজন হয়। বিতর্কের মূল বিষয় ছিল, ”বেদ মূর্তিপূজা সমর্থন করে?”[১৭] বিতর্কে ৫০,০০০ এরও বেশি লোকের উপস্থিতি হয়েছিল বলে শুনা যায়। সেই বিতর্কেও স্বামী দয়ানন্দ কাশীর পণ্ডিতদের পরাজিত করেছিলেন।
F) বিতর্ক পাশাপাশি তিনি বহু সমাবেশে বক্তৃতা রাখতেন, এবং তার ব্যাখ্যান শুনতে বহু লোকের সমাগম হতো, যার ফলে বহু লোক বৈদিক মতবাদে প্রভাবিত হয়।[১৭] দয়ানন্দ সরস্বতী নিরাকার একেশ্বরবাদি মত প্রচার করেছিলেন। তিনি বেদ ভিত্তিক বৈদিক সংস্কৃতি ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন।[১৫] নারীদের সমান অধিকার ও সম্মানের কথা তিনি বলেন। বলিপ্রথা, বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধেও তিনি কথা বলেছেন।[১৫][১৮] লিঙ্গ, বর্ণ নির্বিশেষে সকল শিশুর বেদ শিক্ষার পক্ষে মত দিয়েছেন। বৈদিক শাস্ত্রের প্রতি মানুষের বিমূখতার জন্য তিনি বৈদিক বিদ্যালয়ের গুরুত্ব উপলব্ধি করেন এবং বিভিন্ন স্থানে বৈদিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন।[১৭]
G) তিনি মনে করতেন ব্রাহ্মণরা বেদ হতে বিচ্যুত হয়ে পড়ায় হিন্দু সমাজ ধ্বংস হয়ে পড়ছে।  সায়ণ, মহীধর, উব্বট, ম্যাক্স মুলার প্রভৃতি বেদ ভাষ্যকাররা বেদের যথার্থ অর্থ নিরূপন করতে সমর্থ হননি।
H) তার জীবদ্দশায় তিনি সম্পূর্ণ যজুর্বেদ ও ঋগ্বেদের (প্রথম থেকে ৭/৬১/২ পর্যন্ত) ভাষ্য রচনা করেছিলেন। তিনি সেই ভাষ্যে কোনো প্রকার স্বকপোলকল্পিত বক্তব্য সংযুক্ত না করে, প্রাচীন আর্ষ শাস্ত্র অনুসারেই বেদের ভাষ্য প্রণয়ন করেন।[১৯] তথাপি তার ভাষ্য তৎকালীন পৌরাণিক ব্রাহ্মণদের মাঝে গৃহীত হয়নি।[১৭] 
I) তিনি সকলকে মাংস ভক্ষণ করতে নিষেধ করেন। 
J)  জাতীয় সংহতি স্থাপনের জন্য তিনি হিন্দিকে জাতীয় ভাষা এবং লিপিতে দেবনাগরী হিসেবে ব্যবহারের আহ্বান জানান। 
K) তার মতাদর্শ এবং লেখনি বিভিন্ন লেখক ব্যবহার করেছেন। এদের মধ্যে শ্যামজী কৃষ্ণ বর্মা সহ সুভাষ চন্দ্র বসু; লালা লাজপত রায়; ম্যাডাম কামা; বিনায়ক দামোদর সাভারকর; লালা হরদয়াল; মদন লাল ধিংরা; রাম প্রসাদ বিসমিল; মহাদেব গোবিন্দ রণাদে;  স্বামী শ্রদ্ধানন্দ; এস সত্যমূর্তি; পণ্ডিত লেখ রাম; মহাত্মা হংসরাজ প্রমুখ। অন্যান্য প্রশংসকদের মধ্যে ছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ,[২১] রামকৃষ্ণ,[২২] বিপিন চন্দ্র পাল,[২৩] বল্লভভাই প্যাটেল,[২৪] শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি এবং রোমান রোল্যান্ড, যারা স্বামী দয়ানন্দকে অসাধারণ ও অনন্য ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচনা করতেন।[২৫]
L) 

No comments:

Post a Comment